1. rumamun1986@gmail.com : রাঙ্গুনিয়া খবর : রাঙ্গুনিয়া খবর
  2. info@www.ranguniakhobor.online : রাঙ্গুনিয়া খবর :
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো সংশোধনের প্রজ্ঞাপন জারি রাঙ্গুনিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাজমিস্ত্রীর মৃত্যু রাঙ্গুনিয়া সাহাব্দীনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি গঠিত এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো সংশোধনের প্রজ্ঞাপন জারি রাঙ্গুনিয়া মরিয়মনগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি গঠিত রাঙ্গুনিয়ার ভবানিমিল এলাকায় সিএনজি – পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত দুই রাঙ্গুনিয়া উত্তর পারুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি গঠিত এসএসসি পরীক্ষায় এক কেন্দ্রের সব শিক্ষককে অব্যাহতি রাঙ্গুনিয়া রাজানগর আর.এ.বি.এম বহুমুখী উচ্চ-বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি গঠিত বেলার সাথে গুমাই কৃষকদের মত বিনিময়

ইসলামে দাড়ির পরিমাণ

প্রতিনিধির নাম :
  • প্রকাশিত: সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৬ বার পড়া হয়েছে

ইসলামে দাড়ির পরিমাণ

প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন – প্রিন্সিপ্যাল আল্লামা শাহ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান আল-কাদেরী

প্রশ্ন: ১. আমাদের এলাকার মসজিদে পঞ্জাগানা ও জুমার নামাযের ইমামের এক মুষ্টি পরিমাণ দাড়ি নাই। দাড়ি ছোট করে একেবারে মুখের সাথে লাগিয়ে রাখেন। আমরা আলেমদের নিকট শুনেছি এক মুষ্টি পরিমাণ দাড়ি না রাখলে ঐ ইমামের পেছনে নামায শুদ্ধ হবে না। তা কতটুকু সত্য এবং দাড়ির পরিমাণ কতটুকু?

আসন্ন রমজানুল মোবারকে নামাযে তারাবীতে দাড়ি মুন্ডানো বা এক মুষ্টির চেয়ে কম দাড়িওয়ালা হাফেজে ক্বোরআনের পেছনে বিভিন্ন মসজিদে মুসল্লিদেরকে নামায পড়তে দেখা যায়। তা শরিয়ত সম্মত কি না? দলিলসহ বিস্তারিতি জানালে খুশী হব।

 মুহাম্মদ মুমিনুল হক ফরাজী
নাজিরহাট, ফকিটছড়ি, চট্টগ্রাম।
(মাসিক তরজুমান প্রশ্নোত্তর : ১৪৩৭ হিজরি রমজান সংখ্যা)

 উত্তর: প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-

«627» حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ قَالُوا حَدَّثَنَا وَكِيعٌ عَنْ زَكَرِيَّاءَ بْنِ أَبِي زَائِدَةَ عَنْ مُصْعَبِ بْنِ شَيْبَةَ عَنْ طَلْقِ بْنِ حَبِيبٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّوَاكُ وَاسْتِنْشَاقُ الْمَاءِ وَقَصُّ الأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ وَنَتْفُ الإِبْطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ)). قَالَ زَكَرِيَّاءُ قَالَ مُصْعَبٌ وَنَسِيتُ الْعَاشِرَةَ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ الْمَضْمَضَةَ. زَادَ قُتَيْبَةُ قَالَ وَكِيعٌ انْتِقَاصُ الْمَاءِ يَعْنِي الاِسْتِنْجَاءَ.
باب خِصَالِ الْفِطْرَةِ: كتب الطهارة

নবীগণের দশটি সুন্নাত, তন্মধ্যে একটি হল দাড়ি লম্বা করা।
[সহীহ মুসলিম শরীফ]১ম খন্ড পৃষ্ঠা নং ১২৯ হাদিস নং ৬২৭

«620» حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ وَعَمْرٌو النَّاقِدُ وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ جَمِيعًا عَنْ سُفْيَانَ- قَالَ أَبُو بَكْرٍ حَدَّثَنَا ابْنُ عُيَيْنَةَ- عَنِ الزُّهْرِيِّ عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ((الْفِطْرَةُ خَمْسٌ- أَوْ خَمْسٌ مِنَ الْفِطْرَةِ- الْخِتَانُ وَالاِسْتِحْدَادُ وَتَقْلِيمُ الأَظْفَارِ وَنَتْفُ الإِبْطِ وَقَصُّ الشَّارِبِ)).
«621» حَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ وَحَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى قَالاَ: أَخْبَرَنَا ابْنُ وَهْبٍ أَخْبَرَنِي يُونُسُ عَنِ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: ((الْفِطْرَةُ خَمْسٌ الاِخْتِتَانُ وَالاِسْتِحْدَادُ وَقَصُّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمُ الأَظْفَارِ وَنَتْفُ الإِبْطِ)).

সকল নবী-রসূল দাড়ি রেখেছেন তাই দাড়ি মুন্ডিয়ে ফেলা হারাম এবং গুনাহের কাজ। বিশিষ্ট ফকিহ সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

623» حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى حَدَّثَنَا يَحْيَى يَعْنِي ابْنَ سَعِيدٍ (ح) وَحَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ حَدَّثَنَا أَبِي جَمِيعًا عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ عَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ((أَحْفُوا الشَّوَارِبَ وَأَعْفُوا اللِّحَى)).
باب خِصَالِ الْفِطْرَةِ: كتب الطهارة(رواه مسلم -جلد ١-صفحة-١٢٩)

অর্থাৎ তোমরা মুশরিকদের বিপরীত কর, দাড়ি লম্বা রাখ এবং গোঁফ মুন্ডিয়ে ফেল।
[সহীহ বোখারী ও সুনানে বায়হাকী]

625» حَدَّثَنَا سَهْلُ بْنُ عُثْمَانَ حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ عَنْ عُمَرَ بْنِ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا نَافِعٌ عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ أَحْفُوا الشَّوَارِبَ وَأَوْفُوا اللِّحَى)).

باب خِصَالِ الْفِطْرَةِ: كتب الطهارة(رواه مسلم -جلد ١-صفحة-١٢٩) باب خِصَالِ الْفِطْرَةِ: كتب الطهارة(رواه مسلم -جلد ١-صفحة-١٢٩)

ইসলামী শরিয়ত মতে একমুষ্টি বা চার আঙ্গুল পরিমাণ দাড়ি লম্বা করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বা ওয়াজিব পর্যায়ভুক্ত। ফকিহগণ এক মুষ্টির কমে দাড়ি রাখা মাকরূহ এবং কেউ কেউ হারাম বলেছেন। চার মাজহাবের ইমামগণের মতেও দাড়ি মুণ্ডানো হারাম সাব্যস্ত। সুতরাং দাড়ি মুণ্ডানো ব্যক্তি প্রকাশ্য ফাসিক। তার জন্য তাওবা আবশ্যক, এমন ব্যক্তিকে যে কোন নামাযে- পঞ্জেগানা, জুমা, ঈদের নামায, জানাযা ও তারাবীতে ইমাম বানানো গুনাহ্ এবং তার পেছনে নামায আদায় মাকরূহে তাহরীমা। যা পরিবর্তীতে পুনঃরায় আদায় করা ওয়াজিব।

এ বিষয়ে ইসলামী শরিয়তের নির্ভরযোগ্য কিতাবের উদ্ধৃতি প্রদত্ত হল:
ইসলামের নিদর্শন সমূহের অন্যতম নিদর্শন দাড়ি। যা পূর্ববর্তী নবীগণের সময় হতে প্রচলিত একটি বিধান। নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

627» حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ قَالُوا حَدَّثَنَا وَكِيعٌ عَنْ زَكَرِيَّاءَ بْنِ أَبِي زَائِدَةَ عَنْ مُصْعَبِ بْنِ شَيْبَةَ عَنْ طَلْقِ بْنِ حَبِيبٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّوَاكُ وَاسْتِنْشَاقُ الْمَاءِ وَقَصُّ الأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ وَنَتْفُ الإِبْطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ)). قَالَ زَكَرِيَّاءُ قَالَ مُصْعَبٌ وَنَسِيتُ الْعَاشِرَةَ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ الْمَضْمَضَةَ. زَادَ قُتَيْبَةُ قَالَ وَكِيعٌ انْتِقَاصُ الْمَاءِ يَعْنِي الاِسْتِنْجَاءَ.

باب خِصَالِ الْفِطْرَةِ: كتب الطهارة(رواه مسلم -جلد ١-صفحة-١٢٩)

অর্থাৎ পূর্ববর্তী নবী-রসূলগণের দশটি সুন্নাতের অন্যতম হল দাড়ি লম্বা করা এবং গোঁফ ছোট করা।
[সহীহ মুসলিম শরীফ]

আর শরিয়তের দৃষ্টিতে দাড়ি বলা হয়-
اللِّحْيَةِ شَعْرَ الْخَدَّيْنِ وَالذَّقَنِ (تَاج الْعَرُوس- ج ১০ – ص ৩২৩)
অর্থাৎ দাড়ি হল দু’চোয়াল ও থুতনির চুলগুচ্ছ।
[তাজুল উরুস খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা ৩২৩]

অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম সাধারণভাবে দাড়ি রাখা ওয়াজিব বলেছেন। কারণ দাড়ি রাখার জন্য নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ প্রদান করেছেন। আর আমর/নির্দেশ ওয়াজিব হওয়াকে চায়।
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করিম হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
انهكوا الشوارب واعفوا اللحى-

«5892» حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مِنْهَالٍ حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ زَيْدٍ عَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ((خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ، وَفِّرُوا اللِّحَى، وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ)). وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا حَجَّ أَوِ اعْتَمَرَ قَبَضَ عَلَى لِحْيَتِهِ، فَمَا فَضَلَ أَخَذَهُ.
[طرفه 5893، تحفة 8236].
অর্থাৎ তোমরা গোঁফ ছোট কর ও দাড়ি লম্বা রাখ।
[সহীহ বোখারী শরীফ: খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৮৭৫]

«5892» حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مِنْهَالٍ حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ زَيْدٍ عَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ((خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ، وَفِّرُوا اللِّحَى، وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ)). وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا حَجَّ أَوِ اعْتَمَرَ قَبَضَ عَلَى لِحْيَتِهِ، فَمَا فَضَلَ أَخَذَهُ.
[طرفه 5893، تحفة 8236].

হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

«624» وَحَدَّثَنَاهُ قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ نَافِعٍ عَنْ أَبِيهِ عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ أَمَرَ بِإِحْفَاءِ الشَّوَارِبِ وَإِعْفَاءِ اللِّحْيَةِ.
باب خِصَالِ الْفِطْرَةِ: كتب الطهارة(رواه مسلم -جلد ١-صفحة-١٢٩)
(مسلم- ج ১- ص ১২৯)
অর্থাৎ আমি গোঁফ ছোট এবং দাড়ি লম্বা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করছি।
[সহীহ মুসলিম শরীফ: খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৯, সুনানে আবু দাঊদ: খণ্ড ২, পৃষ্ঠা নং ৫৭৭ , তিরমিযি শরীফ: পৃষ্ঠা ৩৯৪, মুয়াত্তা ইমাম মালিক: পৃষ্ঠা ৭২১]

হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إنْ أَهَلَّ الشِّرْك يَعْفُونَ شَوَارِبَهُمْ وَيَحُفُّون لِحَاهُمْ فَخَالِفُوهُمْ فَاعْفُوا اللِّحَى وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ (مَجْمَعِ الزَّوَائِدِ- ج ৫- ص ১৬৬)
অর্থাৎ মুশরিকরা গোঁফ লম্বা করে ও দাড়ি মুণ্ডিয়ে ফেলে। তোমরা তাদের বিপরীত কর দাড়ি লম্বা রাখ, গোঁফ ছোট কর।
[মাজমাউজ যাওয়াইদ: খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৬৬
বিশিষ্ট খাদেমে রাসূল হযরত আনাস বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
خَالِفُوا الْمَجُوسَ جُزُّوا الشَّوَارِبَ وَأَوْفَرُوا اللَّحْيُ


অর্থাৎ তোমরা মাজুসির (অগ্নি পূজারী)দের বিরোধিতা কর। গোঁফ ছেটে ফেল এবং দাড়ি লম্বা রাখ।
[মাজমাউজ যাওয়াইদ: খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৬৬]
রঈসুল মুফাস্সেরীন হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-

لِمَا فَتَحَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَكَّةَ قَالَ إنْ اللَّهُ وَرَسُولُهُ حَرَّمَ شُرْبِ الْخَمْرِ وَثَمَنِهَا قَالَ أَحْفُوا الشَّوَارِبَ وَأَعْفُوا اللِّحَى

(مجمع الزوائد- ج ৫- ص ১২৮-১২৯)
অর্থাৎ নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা বিজয় করলেন তখন বললেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মদপান, তার মূল্য (ক্রয়-বিক্রয়) হারাম করেছেন। তিনি আরো বলেন- গোফ ছেটে ফেল ও দাড়ি লম্বা কর।
[মাজমাউয্ যাওয়াইদ: খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১৬৮-১৬৯]
হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

«626» حَدَّثَنِي أَبُو بَكْرِ بْنُ إِسْحَاقَ أَخْبَرَنَا ابْنُ أَبِي مَرْيَمَ أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ أَخْبَرَنِي الْعَلاَءُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ يَعْقُوبَ مَوْلَى الْحُرَقَةِ عَنْ أَبِيهِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((جُزُّوا الشَّوَارِبَ وَأَرْخُوا اللِّحَى خَالِفُوا الْمَجُوسَ)).
باب خِصَالِ الْفِطْرَةِ: كتب الطهارة(رواه مسلم -جلد ١-صفحة-١٢٩)

অর্থাৎ গোফ কেটে ফেল ও দাড়ি লম্বা কর। আর অগ্নিপূজারীর বিপরীত কর। [মুসলিম শরীফ: ১ম খণ্ড]

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা হতে বর্ণিত, নবীয়ে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

عشر من الفطرة قص الشارب واعفاء اللحية والسواك واستنثاق الماء- الحديث
627» حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ قَالُوا حَدَّثَنَا وَكِيعٌ عَنْ زَكَرِيَّاءَ بْنِ أَبِي زَائِدَةَ عَنْ مُصْعَبِ بْنِ شَيْبَةَ عَنْ طَلْقِ بْنِ حَبِيبٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ قَصُّ الشَّارِبِ وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ وَالسِّوَاكُ وَاسْتِنْشَاقُ الْمَاءِ وَقَصُّ الأَظْفَارِ وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ وَنَتْفُ الإِبْطِ وَحَلْقُ الْعَانَةِ وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ)). قَالَ زَكَرِيَّاءُ قَالَ مُصْعَبٌ وَنَسِيتُ الْعَاشِرَةَ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ الْمَضْمَضَةَ. زَادَ قُتَيْبَةُ قَالَ وَكِيعٌ انْتِقَاصُ الْمَاءِ يَعْنِي الاِسْتِنْجَاءَ.
باب خِصَالِ الْفِطْرَةِ: كتب الطهارة(رواه مسلم -جلد ١-صفحة-١٢٩)

(مسلم- ج ১- ص ১২৯)
অর্থাৎ দশটি বিষয় পূর্ববর্তী নবী রসূলগণের ফিতরত (স্বভাব) ছিল তৎমধ্যে ১. গোফ ছেটে ফেলা, ২. দাড়ি লম্বা করা, ৩. মিসওয়াক করা, ৪. অযুর সময় নাকে পানি দেওয়া ইত্যাদি।
[মুসলিম শরীফ: খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৯, আবু দাঊদ শরীফ: খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৮, নাসাঈ শরীফ: খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৩৭, সুনানে ইবনে মাজা: পৃষ্ঠা ২৫]

হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
ذَكَرَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَجُوسَ فَقَالَ إِنَّهُمْ يُوفُون شَارِبُهُمْ وَيَحْلِقُونَ لِحَاهُمْ فَخَالِفُوهُمْ-

অর্থাৎ একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর নিকট মজুসি (অগ্নিপূজারী) সম্পর্কে উল্লেখ করা হলে তিনি বলেন- তারা গোঁফ লম্বা করে এবং দাড়ি ছেটে ফেলে, তোমরা তাদের বিপরীত কর।
[সহীহ ইবনে হিব্বান: খণ্ডন ৮, পৃষ্ঠা ৪০৮]
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

«5892» حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مِنْهَالٍ حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ زَيْدٍ عَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ((خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ، وَفِّرُوا اللِّحَى، وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ)). وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا حَجَّ أَوِ اعْتَمَرَ قَبَضَ عَلَى لِحْيَتِهِ، فَمَا فَضَلَ أَخَذَهُ.
[طرفه 5893، تحفة 8236].

(صحيح البخارى- ج ২- ص ৮৭৫)
অর্থাৎ তোমরা মুশরিকদের বিপরীত কর। দাড়ি লম্বা কর ও গোঁফ ছেটে রাখ।
[সহীহ বুখারী শরীফ: খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৮৭৫, মুসান্নামে ইবনে আবি শাইবা: খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৩৭৫, সুনানে আবু দাউদ: খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩২১]

উল্লিখিত হাদীস সমূহের পরিপ্রেক্ষিতে চার মাযহাবের ইমামগণ ঐক্যমত্য পোষণ করে ফতোয়া প্রদান করেছেন যে, দাড়ি মুণ্ডানো হারাম। যে দাড়ি মুণ্ডায় সে ফাসেকে মুলিন বা প্রকাশ্য পাপাচারী।
এমন ব্যক্তির পেছনে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী। যা পরবর্তীতে পুনরায় আদায় করা ওয়াজিব।
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফতোয়া গ্রন্থ الدرالمختار (দুররুল মুখতার)-এ বর্ণিত আছে-
يَحْرُمُ عَلَى الرَّجُلِ قَطْعُ لِحْيَتِهِ-

অর্থাৎ পুরুষের জন্য দাড়ি মুণ্ডানো হারাম।
[দুররুল মোখতার কৃত: ইমাম আলাউদ্দীন হানাফী রহ.]
হানাফী মাযহাবের অন্যতম ভাষ্যকার ও ফকিহ আল্লামা ইবনুল হুমাম তার কিতাব হেদায়ার ব্যাখ্যায় ‘ফতহুল কদির’-এ খণ্ড ২, পৃষ্ঠ ২৭, প্রসিদ্ধ ফতোয়া গ্রন্থ ‘দুররুল মুখতার’ খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১১৭, ‘বাহরুর রাইক্ব’ কিতাবের খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৮০ এবং ‘তাহাবী শরীফ’র ৪১১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-
اللَّفْظُ لِلطَّحَاوِيّ إلَّا خُذْ مِنْ اللِّحْيَةِ وَهُوَ دُونَ ذَلِكَ (أَيْ بِقَدْرِ الْمَسْنُونِ وَهُوَ الْقُبْضَةُ) كَمَا يَفْعَلُهُ بَعْضُ الْمُفَارَبه مُخَنَّشه الرِّجَالُ لَمْ يَجُزْ أَحَدٌ كُلِّهَا فِعْلُ يَهُودِ الهِنْدِ و مَجُوس الْأَعَاجِم-

দাড়ি এক মুষ্টির কমে কেটে ছেটে রাখা যা কোন কোন পাশ্চাত্যের লোকেরা এবং মেয়েলি স্বভাবের পুরুষ লোকেরা করে থাকে তা কারো নিকট জায়েয নেই। আর দাড়ি সম্পূর্ণ মুণ্ডানো ইয়াহুদী ও ইরানের মাজুসি (অগ্নিপূজারীদের) কাজ।
তাছাড়া ‘গুনিয়া’ কিতাবের ১ম খণ্ড, ২০৮ পৃষ্ঠায় ‘বাহরুর রাইক্ব’ কিাতবের ২য় খণ্ড, ২৮০ পৃষ্ঠায় ‘দুররুল মুখতার’ কিতাবের ১ম খন্ড, ১৫২ পৃষ্ঠায়, ‘ফতহুল কদির’ কিতাবের ২য় খণ্ড, ২৭০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-
يؤذى على ذلك لارتكاب المحرم-
অর্থাৎ দাড়ি মুণ্ডনকারীকে শাস্তি প্রদান করা হবে। কেননা সে হারাম কাজে লিপ্ত হয়েছে।

দাড়ির পরিমাণ
ইমাম ও ফকিহগণের সর্বসম্মতিতে দাড়ি রাখা ওয়াজিব। কিন্তু দাড়ির পরিমাণ নিয়ে ইমামগণের মাঝে দুটি মত পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে তা আলোচনা করা হল।
প্রথম অভিমত- এক মুষ্টির বা চার আঙ্গুল পরিমাণ দাড়ি রাখা ওয়াজিব। এর কম রাখা হারাম আর এমন ব্যক্তি ফাসিকে মুলিন বা প্রকাশ্যে পাপাচারী বলে গণ্য। এমন ব্যক্তির পেছেন যে কোন নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী। অর্থাৎ পুনারায় উক্ত নামায আদায় করা ওয়াজিব।
দলিল- আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান ফাযেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর ফতোয়ায়ে ‘রযবিয়্যা’তে বর্ণনা করেন-
ڈاڑى حد مقرر شرع سے كم نه كرنا واجب-
অর্থাৎ শরিয়ত নির্ধারিত পরিমাণের (একমুষ্টি) এর চেয়ে কম না রাখা ওয়াজিব।
[ফতোয়ায়ে রযবিয়্যাহ্: খণ্ড ২২, পৃষ্ঠা ১১৫]
ইমাম আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
حلق كردن لحية حرام ست وروش افرنج وپنود وجو القيان كه اليشاں را قلندريه نيز گويند وگزاشتن ا بقدر قبضه واجب ست-
অর্থাৎ দাড়ি মুণ্ডানো হারাম, এটা আফরঙ্গি, হিন্দু, যুল কিয়ানদের চরিত্র তাদেরকে কলন্দরিয়াও বলা হয়।
[আশিয়াতুল লুমআত শরহে মেশকাত: খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২১২]
সদরুল শরিয়া হযরত মুফতি আমজাদ আলী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ‘বাহারে শরিয়ত’ এ উল্লেখ করেছেন-
ڈاڑى بڑهانا سنن انبياءے سابقين هے- منانا يا ايك مشت سے كم ركهنا حرام هے- (بهار شريعت ص ১৯৭- ج ১৬)
অর্থাৎ দাড়ি লম্বা রাখা পূর্ববর্তী নবী-রসূলগণের সুন্নাত। তথা তরিকা আর মুণ্ডানো বা এক মুষ্টির কমে ছেটে রাখা হারাম। [বাহারে শরিয়ত: খণ্ড ১৬, পৃষ্ঠা ১৯৭]
ফকিহে মিল্লাত হযরত আল্লামা মুফতি জালালুদ্দীন আহমদ তাঁর প্রসিদ্ধ ফতোয়া গ্রন্থ ‘ফতোয়ায়ে ফয়যুর রাসূল’-এ বর্ণনা করেন-
لهذا بار بارڈ اڑى كا منڈانے والا مرتكب حرام اور فاسق هے امام بنانا گناه اور اس كے پيچهے نماز پڑهنى مكره تحريمى-(فباوى فيض الرسول – ص ২৫৬- ج ১)
অর্থাৎ বার বার দাড়ি মুণ্ডানকারী ফাসেক ও হারামে লিপ্ত এমন ব্যক্তিকে ইমাম বানানো এবং তার পেছনে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী।
[ফতোয়ায়ে ফয়যুর রাসূল: খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৫৯]
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব غنيه شرع منيه তে বর্ণিত আছে-

لِوُقُدَّمُوا فَاسِقًا يَأْثَمُون بِنَاءً عَلَى أَنَّ تَقْدِيمَهُ تَحْرِيم-
অর্থাৎ ফাসেককে (দাড়ি মুণ্ডনকারী) ইমাম বানালে গুনাহগার হবে। কেননা তাকে ফাসেককে ইমাম বানানো হারাম।
طَحْطَاوِيّ عَلَى مَرَاقِي الْفَلَاحِ
কিতাবে বর্ণিত আছে-
الْكَرَاهَةِ فِي الْفَاسِقِ تَحْرِيمِيَّة- (ص ৩০৩-ج ১)

অর্থাৎ ফাসেকের ক্ষেত্রে মাকরূহ বলতে মাকরূহে তাহরীমীকে বুঝায়।
[তাহতাবী আলা মারাকিয়ূল ফালাহ্: পৃষ্ঠা ৩০৩, খণ্ড ১]
হানাফী মাযহাবের অন্যতম ফতোয়া গ্রন্থ ‘দুররুল মুখতার’-এ বর্ণিত আছে-
كُلُّ صَلَاةٍ أُدِّيَتْ مَعَ كَرَاهَةِ التَّحْرِيمِ- وَجَبَ إعَادَتُهَا- ص ৪৫৭-ج১-

সে সমস্ত নামায মাকরূহে তাহরীমীর সাথে আদায় করা হয়েছে। তা পুনরায় পড়া ওয়াজিব।
[দুররুল মখতার: খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৫৭]
দ্বিতীয় অভিমত- সাধারণত দাড়ি রাখা ওয়াজিব। তবে এ মুষ্টি পরিমাণ দাড়ি রাখা সুন্নাত। ওয়াজিব নয়। তাি এক মুষ্টির কমে দাড়ি রাখলে তার পেছনে যে কোন নামাযে ইকতিদা করা শুদ্ধ হবে। হারাম হবে না।
দলীল- আল্লামা ফরগানী মুরগিনানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বিরচিত ‘হিদায়া’ কিতাবে বর্ণিত আছে-

وَلَا يَفْعَلُ لِتَطْوِيلِ اللِّحْيَةِ إذَا كَانَتْ بِقَدْرِ الْمَسْنُونِ وَهُوَ الْقُبْضَةُ- هِدَايَة ص ৩০১-ج ১-

অর্থাৎ দাড়ি সুন্নাহ্ মোতাবেক থাকলে লম্বা করার জন্য তেল ব্যবহার করবে না। আর দাড়ির সুন্নাহ্ পরিমাণ হল এক মুষ্টি। [হিদায়া: খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২০১]
হানাফী মাযহাবের অন্যতম ভাষ্যকার ও প্রসিদ্ধ ফকিহ্ আল্লামা কামাল উদ্দীন ইবনে হুমমাম তাঁর কিতাব ‘ফাতহুল ক্বদির’-এ বর্ণনা করেন-

وَهُوَ أَيْ الْقَدْرُ الْمَسْنُونُ فِي اللِّحْيَةِ الْقَبْضَة-
অর্থাৎ দাড়ির সুন্নাত পরিমাণ হল এক মুষ্টি।
[ফাতহুল ক্বদির: খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৭০]
আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী আল্ হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
بِقَدْرِ الْمَسْنُونِ وَهُوَ الْقُبْضَةُ- (عِنَايَة ص ১৩৪- ج১)

অর্থাৎ এক মুষ্টি পরিমাণ দাড়ি রাখা সুন্নাত।
[ইনায়া: খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৩৪]
আল্লামা ইবনে নুজাইম হানাফী তার কিতাব ‘বাহরুর রাইক্ব’-এ উল্লেখ করেন-

بِقَدْرِ الْمَسْنُونِ وَهُوَ الْقَبْضَة-
অর্থাৎ সুন্নাত মোতাবেক দাড়ি হল এক মুষ্টি।
[বাহরুর রাইক্ব: খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৮০]
আল্লামা যাইলায়ী হানাফী তাঁর কিতাব تَبْيِين الْحَقَائِق -এ বর্ণনা করেন-
بِقَدْرِ الْمَسْنُونِ وَهُوَ الْقُبْضَةُ-( ص৩৩১-ج১)

অর্থাৎ সুন্নাত মোতাবেক দাড়ি হল এক মুষ্টি পরিমাণ রাখা।
[তাবইনুল হাকাইক শরহে কানজুদ দাকাইক: খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৩১]

٤٤٢١ – وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا – قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” «خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ: أَوْفِرُوا اللِّحَى، وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ» “. وَفِي رِوَايَةٍ: ” «أَنْهِكُوا الشَّوَارِبَ، وَأَعْفُوا اللِّحَى» “. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.
ــ
٤٤٢١ – (وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ) : أَيْ: فَإِنَّهُمْ يَقُصُّونَ اللِّحَى وَيَتْرُكُونَ الشَّوَارِبَ حَتَّى تَطُولَ، كَمَا فَسَّرَهُ بِقَوْلِهِ: (أَوْفِرُوا) : أَيْ أَكْثِرُوا (اللِّحَى) : بِكَسْرِ اللَّامِ وَحُكِيَ ضَمُّهَا وَبِالْقَصْرِ جَمْعُ لِحْيَةٍ بِالْكَسْرِ مَا يَنْبُتُ عَلَى الْخَدَّيْنِ وَالذَّقَنِ، ذَكَرَهُ السُّيُوطِيُّ، وَالْمَعْنَى اتْرُكُوا اللِّحَى كَثِيرًا بِحَالِهَا وَلَا تَتَعَرَّضُوا لَهَا وَاتْرُكُوهَا لِتَكْثُرَ. (وَأَحِفُّوا) : بِقَطْعِ الْهَمْزَةِ أَيْ قُصُّوا (الشَّوَارِبَ) : فِي الْجَامِعِ الصَّغِيرِ: قَدَّمَ هَذِهِ الْجُمْلَةَ عَلَى الْأُولَى، ثُمَّ فِي الْمُغْرِبِ: أَحْفَى شَارِبَهُ بِالْحَاءِ الْمُهْمَلَةِ أَيْ بَالَغَ فِي جَزِّهِ. قِيلَ: الْإِحْفَاءُ قَرِيبٌ مِنَ الْحَلْقِ، وَأَمَّا الْحَلْقُ فَلَمْ يَرِدْ، بَلْ كَرِهَهُ بَعْضُ الْعُلَمَاءِ وَرَآهُ بِدْعَةً. قَالَ الْقَاضِي وَغَيْرُهُ: الْإِحْفَاءُ الِاسْتِقْصَاءُ فِي الْكَلَامِ، ثُمَّ اسْتُعِيرَ لِلِاسْتِقْصَاءِ فِي أَخْذِ الشَّارِبِ، وَفِي مَعْنَاهُ قَوْلُهُ: (وَفِي رِوَايَةٍ: ” أَنْهِكُوا الشَّوَارِبَ) : وَهُوَ بِفَتْحِ الْهَمْزَةِ وَكَسْرِ الْهَاءِ، وَفِي نُسْخَةٍ بِهَمْزَةِ وَصْلٍ مَكْسُورَةٍ وَفَتْحِ الْهَاءِ، يُقَالُ: نَهِكَ كَفَرِحَ وَأَنْهَكَ بَالَغَ فِي قَصِّهِ. (وَأَعْفُوا اللِّحَى) : بِقَطْعِ الْهَمْزَةِ. بِمَعْنَى أَوْفِرُوا، وَفِي الْإِحْيَاءِ عَشْرُ خِصَالٍ مَكْرُوهَةٌ، وَبَعْضُهَا أَشَدُّ مِنْ بَعْضٍ، وَهُوَ خِضَابُهَا بِالسَّوَادِ، وَتَبْيِيضُهَا بِالْكَبْرِيتِ وَغَيْرِهِ، وَنَتْفُهَا وَنَتْفُ الشَّيْبِ، وَالنُّقْصَانُ مِنْهَا وَالزِّيَادَةُ فِيهَا، وَتَسْرِيحُهَا تَصَنُّعًا لِأَجْلِ الرِّيَاءِ، وَتَرْكُهَا شَعِثَةً إِظْهَارًا لِلزُّهْدِ، وَالنَّظَرُ إِلَى سَوَادِهَا عَجَبًا بِالشَّبَابِ، وَإِلَى بَيَاضِهَا تَكْبُّرًا بِعَلَقِ السِّنِ، وَخِضَابُهَا بِالْحُمْرَةِ وَالصُّفْرَةِ تَشْبِيهًا بِالصَّالِحِينَ لَا لِاتِّبَاعِ السُّنَّةِ. وَزَادَ النَّوَوِيُّ: وَعَقْدُهَا وَتَصْفِيفُهَا طَاقَةً فَوْقَ طَاقَةٍ وَحَلْقُهَا إِلَّا إِذَا نَبَتَ لِلْمَرْأَةِ لِحْيَةٌ فَيُسْتَحَبُّ لَهَا حَلْقُهَا، ذَكَرَهُ الطِّيبِيُّ، وَسَيَجِيءُ اسْتِحْبَابُ أَخْذِ اللِّحْيَةِ طُولًا وَعَرْضًا، لَكِنَّهُ مُقَيَّدٌ بِمَا إِذَا زَادَ عَلَى الْقَبْضَةِ، وَهَذَا فِي الِابْتِدَاءِ، وَأَمَّا بَعْدَمَا طَالَتْ فَقَالُوا: لَا يَجُوزُ قَصُّهَا كَرَاهَةَ أَنْ تَصِيرَ مِثْلَهُ. وَأَقُولُ: يَنْبَغِي أَنْ يُدْرَجَ فِي أَخْذِهَا لِتَصِيرَ مِقْدَارَ قَبْضَةٍ عَلَى مَا هُوَ السُّنَّةُ وَالِاعْتِدَالُ الْمُتَعَارَفُ، لَا أَنَّهُ يَأْخُذُهَا بِالْمَرَّةِ فَيَكُونُ مِثْلَهُ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ) .

মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-

وَأَقُولُ: يَنْبَغِي أَنْ يُدْرَجَ فِي أَخْذِهَا لِتَصِيرَ مِقْدَارَ قَبْضَةٍ عَلَى مَا هُوَ السُّنَّةُ وَالِاعْتِدَالُ الْمُتَعَارَفُ، لَا أَنَّهُ يَأْخُذُهَا بِالْمَرَّةِ فَيَكُونُ مِثْلَهُ
(مرقاه- ص ২৯১-ج৮)
অর্থাৎ আমার মতে দাড়ি সে পরিমাণ কাটা উচিত যাতে এক মুষ্টি হয়। যা সুন্নাত।
[মিরকাত শরহে মেশকাত: খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ২৯১]

আল্লামা শারনাবলাই ও আল্লামা আলাউদ্দীন হাসকফি হানাফী বলেন-
تَطْوِيلُ اللِّحْيَةِ إذَا كَانَتْ بِقَدْرِ الْمَسْنُونِ وَهُوَ الْقُبْضَةُ،
অর্থাৎ এক মুষ্টি দাড়ি রাখা সুন্নাত।
[হাশিয়াতুল দুররুল মুখতার: পণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২০৮, দুররুল মুখতার খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩৫৯]
হানাফী মাযহাবের অন্যতম ফকিহ্ আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী ফতোয়ায়ে ‘রদ্দুল মুখতার’-এ বলেন-
(
وَالسُّنَّةُ بِهَا الْقَبْضَة) وَهُوَ أَنَّ يَقْبِضَ الرَّجُلُ لِحْيَتَهُ مَازِاد مِنْهَا عَلَى قَبْضِهِ قَطْعُهُ (رَدّ الْمُخْتَار- ص ৩৫৯-ج ৫)
অর্থাৎ এক মুষ্টি দাড়ি রাখা সুন্নাত। এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কেটে ফেলবে।
[রদ্দুল মুহতার: খণ্ড ৫, পৃ. ৩৫৯]
ইমাম আবু জাফর তাহাবী হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
وَأَمَّا اللِّحْيَةُ فَذَكَرَ مُحَمَّدُ فِي الْأثَارِعن الْإِمَامُ أَنْ السُّنَّةِ أَنْ يَقْطَعَ مَازِاد عَلَى قَبْضِهِ يَدِه (حَاشِيَة الطَّحَاوِيّ- ص ৩১৬)

অর্থাৎ ইমাম মুহাম্মদ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি কিতাবুল আসার-এ ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি হতে বর্ণনা করেন- এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কাটা সুন্নাত। [হাশিয়াতুল তাহাবী: পৃ. ৩১৬]

হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফতোয়া গ্রন্থ ফতোয়ায়ে ‘আলমগীরি’তে বর্ণিত আছে-
وَالْقَبْضُ سُنَّةٌ فِيهَا وَهُوَ أَنَّ يَقْبِضَ الرَّجُلُ لِحْيَتَهُ فَإِنْ زَادَ مِنْهَا عَلَى قَبْضِهِ قَطْعُهُ كَذَا ذَكَرَ مُحَمَّدٌ رَحِمَهُ اللَّهُ فِي كِتَابِهِ الْأثَارِ عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ رَحِمَهُ اللَّهُ وَقَالَ بِهِ نَأْخُذُ كَذَا فِي مُحِيطِ السَّرَخْسِيِّ- (ص ৩৫৮-ج ৫)

অর্থাৎ দাড়ি মুষ্টি পরিমাণ রাখা সুন্নাত তার বেশী দাড়ি হলে, এক মুষ্টি দাড়ি ধরে অতিরিক্ত দাড়ি কেটে ফেলবে।
باب قَصِّ الشَّارِبِ:
وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يُحْفِي شَارِبَهُ حَتَّى يُنْظَرَ إِلَى بَيَاضِ الْجِلْدِ، وَيَأْخُذُ هَذَيْنِ، يَعْنِي بَيْنَ الشَّارِبِ وَاللِّحْيَةِ.
صحيه بخاري جلد-٢-صفحة ٨٧٥

ইমাম মুহাম্মদ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর কিতাবুল আসার-এ ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি হতে বর্ণনা করেছেন- তিনি (ইমাম মুহাম্মদ) বলেন, এই মতকে সমর্থন করি। আর এরূপ বর্ণিত রয়েছে ইমাম সরখসির লিখিত ‘মুহিত’ এর মধ্যে।

উল্লেখিত ফিকহ্ ফতোয়ার উদ্ধৃতি সমূহের আলোকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সাধারণত চার মাযহাবের ইমামগণের মতে পুরুষদের জন্য দাড়ি গজানোর পর হতে দাড়ি রাখা ওয়াজিব। তবে এ মুষ্টি পরিমাণ রাখা ওয়াজিব না সুন্নাত এ বিষয়ে দুটি অভিমত দেখা যায়।

হযরত শেখ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি আশিয়াতুল লোমআত শরহে মেশকাত

এবং ইমাম আ’লা হযরত শাহ্ আহমদ রেযা ফাযেলে বেরলভীর ফতোয়ায়ে রজভীয়া, মুফতি আমজাদ আলী খানের বাহারে শরিয়ত এবং মুফতি জালাল উদ্দীন আমজাদীর ফতোয়ায়ে ফয়যুর রসূল’র বর্ণনা মতে এক মুষ্টি পরিমাণ দাড়ি রাখা ও ওয়াজিব যে সব ইমামের দাড়ি এক মুষ্টির চেয়ে কম (কেটে ছোট করে রেখেছে) উক্ত ইমাম ওয়াজিব তরককারী হিসেবে তার পেছনে যে কোন নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী বা হারাম। উক্ত নামায পুনরায় আদায় করতে হবে।

আর অন্যান্য ইমামগণের মতে (যাদের নাম পূর্বে কিতাবের পৃষ্ঠা নম্বরসহ উল্লেখ করা হয়েছে) সাধারণত: দাড়ি রাখা ওয়াজিব পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত তবে এক মুষ্টি পরিমাণ দাড়ি রাখা সুন্নাত। কোন ইমাম দাড়ি রেখেছে তবে এক মুষ্টির চেয়ে কম তার পেছনে ইকতেদা শরিয়ত মোতাবেক জায়েয। যদিও উত্তম নয়, তার পেছনে আদায়কৃত নামায পুনরায় পড়তে হবে না। মিসরের ওলামায়ে কেরামও উক্ত মত গ্রহণ করেছেন।

শরহে সহীহ মুসলিমে আল্লামা গোলাম রাসূল সাঈদী রহমাতুল্লাহি আলায়হি এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তবে নিরাপদ ও সতর্কতা স্বরূপ ইমাম আ’লা হযরত শাহ্ আহমদ রেযা বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ও শেখ আবদুল হক্ব মুহাদ্দিস দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর অভিমত অনুযায়ী আমল করাটা উচিত।
উল্লেখ্য যে একেবারে দাড়ি মুণ্ডানো ইমামের পেছনে যে কোন নামায (নামাযে তারবীতেও) ইকতাদা করা হরাম। দাঁড়ি মুণ্ডানো ব্যক্তিকে ইমাম বা নামাযে তারাবী পড়ার জন্য নিয়োগ দেয়া শক্ত গুনাহ্ ও হরাম। নামাযে তারাবীর ক্ষেত্রে ও ভালোভাবে দেখে হাফেজ নিয়োগ দানের আহ্বান রইল।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট