চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বিপজ্জনক ৪০ বাঁক
উত্তর চট্টলার লাইফ লাইন খ্যাত চট্টগ্রাম শহরে আস যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হলো চট্টগ্রাম – কাপ্তাই সড়ক। জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে ঘন ঘন দুর্ঘটনায় জনজীবনে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। সড়ক যেন মরণফাঁদ।ব্যস্ততম সড়ক প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে। প্রতিদিন এ সড়কের কোন না কোন অংশে যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে যাত্রী।
ব্যস্ততম চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে দীর্ঘ ৩১ কিলোমিটারে ৪০টি বিপজ্জনক বাঁক যেন মরণফাদে পরিণত হয়েছে। এসব বাঁকের কারণে ঘন ঘন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সারি দিন দিন পাল্লা দিয়ে ভারি হচ্ছে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন চালক ও যাত্রীরা।
গত সপ্তাহে এ সড়কে দুর্ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক, অদক্ষ ও মদ্যপায়ী চালক-হেলপার, ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহন, ফুটপাত দখলসহ সড়কজুড়ে নানা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে এসব দুর্ঘটনা নিত্য ঘটছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
চট্টগ্রামের সাথে রাঙ্গুনিয়াসহ আরো ১টি জেলা ও ৪টি উপজেলার যোগাযোগের অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ সড়কে ১০ হাজারেরও বেশি সিএনজি অটোরিকশা ও বিদ্যুৎচালিত রিকশা, বাস-মিনিবাস চলাচল করে। যেগুলোর অধিকাংশই রেজিস্ট্রেশনবিহীন ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন। চালকদের উল্লেখযোগ্য অংশ অদক্ষ। পুরনো ফিটনেসবিহীন লক্কড়-ঝক্কর গাড়ি, অদক্ষ চালক দ্বারা নিয়ন্ত্রণহীণভাবে চলছে। এসব অদক্ষ গাড়ি চলাচলের কারণে ঘন ঘন দুর্ঘটনা হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রতিদিন এ সড়কে রাঙ্গুনিয়া আসা-যাওয়া করে,সরকারী-বেসরকারী চাকুরীজিবী,ব্যাংকার, ব্যবসায়ী,বিভিন্ন অফিস আদালতে যাতায়াতকারী সাধারণ যাত্রীরা। তাছাড়া পর্যটন মৌসুমে রাঙামাটি, কাপ্তাই, বান্দরবানসহ বিভিন্ন পিকনিক গামী যাত্রীদের যাতায়াত লক্ষ করা যায়।
প্রতিদিন যাতায়াতকারী যাত্রীরা জানান, এ সড়কে ঘন ঘন বাঁকের কারণে চালকদের স্বাভাবিক গাড়ি চালাতে ঝুঁকি দেখা যায়। এ সড়কের মোটর সাইকেল চালকরা বেশিরভাগ কিশোর, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও যুবক শ্রেণির। সড়ক আইন সম্পর্কে তাদের যথেষ্ট ধারণা নেই। হেলমেট ব্যবহারসহ সড়ক আইন মানার ব্যাপারে তারা খুবই উদাসীন। দুই থেকে তিনজন মানুষ নিয়ে বেপরোয়া গতিতে ড্রাইভিং করেন তারা। তাই মোটর সাইকেলে দুর্ঘটনা বেশি হয় এই সড়কে।
সিএনজি চালকরাও প্রতিযোগীতামূলক ভাবে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। তাই সড়কে ঘন ঘন দুর্ঘটনা হচ্ছে। দ্রুত গাড়ি চালাতে গিয়ে বাঁকে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে। এ সড়কটি যেন মৃত্যুকুপে পরিণত হয়েছে। ঘর থেকে বের হলে আবার যে ঘরে ফিরব তার কোন নিশ্চয়তা নেই। সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাও নেই বললে চলে। দুয়েক জায়গায় থাকলেও তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না। চালক ও জনগণের মাঝে সচেতেনতা বাড়াতে হবে।
গত বছরে এ সড়কে দুর্ঘটনায় ৪০ জনের মতো নিহত হয়েছেন। সড়কে যেসব বাঁক রয়েছে সেগুলোতে কোন গতিরোধকও নেই। গত তিন মাসে ১৪ জনের মতো মৃত্যু হয়েছে এই সড়কে।
রাঙ্গুনিয়া সিনিয়র জজ আদালতের এডভোকেট নুরুল আলম বলেন, রাঙ্গুনিয়ায় অবস্থিত কাপ্তাই সড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় আহত নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। সড়কে অনেক বাঁক রয়েছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সরকারেরও উচিত এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। না হয় প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মিছিল ভারি হতে থাকবে।
রাঙ্গুনিয়া যাত্রীকল্যাণ পরিষদের সদস্যরা বলেন, কাপ্তাই সড়ক চার লেনে উন্নিত করা সময়ের দাবী। বিপদ জনক বাঁকের কারণে ও বেপরেয়া গতির কারণে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত-নিহতের প্রধান কারণ। অনেকে এজন্য দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। অনেক বছর ধরে কাপ্তাই সড়ক বর্ধিত ও চার লেন করার জন্য পরিমাপ করে আসছেন। এতে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। সড়কের বাঁকগুলির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। বাঁকগুলোর কারণে সড়কে ঘন ঘন ভয়াবহ দুর্ঘটনা হচ্ছে। মূলতঃ চার লেনে উন্নিত বাঁক প্রসস্থ সোজা করার মাধ্যমে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
চট্টগ্রাম বাস-মিনিবাস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম জানান, সড়কে বাঁকগুলির বিষয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষকে দৃশ্যমান কিছু করার জন্য বিশেষ করে যে স্থানে বাঁক আছে সেখানে ডিভাইডার কিংবা গতিরোধক তৈরির জন্য বলছি। আমরা তাদেরকে ট্যাক্স দিই। কিন্তু সড়ক নিরাপদ করার জন্য তারা কোন উদ্যোগ গ্রহণ করছেন না।
রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) সুজন হাওলাদার জানান, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে অসংখ্য বাঁক। যেখানে বাঁক আছে সেখানে ডিভাইডার স্থাপন করলে গাড়ির গতিরোধ করা যায়। এতে দুর্ঘটনা কমে যাবে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শিবান্দু খাস্তগীর জানান, এ সড়কে দুর্ঘটনা রোধ করার জন্য বাঁকগুলির স্থানে গতিরোধক তৈরির জন্য সাইনবোর্ডসহ পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। অচিরেই তা দৃশ্যমান হবে।