পেশাকে উপজিব্য করে জীবিকা নির্বাহ করা বা সাধারণত পেশা নির্ভরতাকে পেশাদার বলে।
পৃথিবীতে হাজার পেশাদার আছে। জেলে, কামার, কুমার,তাঁতী, ছুতার হতে শুরু করে প্রকৌশলী, ডাক্তার, শিক্ষক ও সাংবাদিক।
দেখুন এবার কার কি কাজ- জেলে মাছ ধরে, কামার দা- ছুরি তৈরি করে, কুমার থালা বাসন তৈরি করে, তাঁতী কাপড় বুনে এভাবে প্রত্যেক পেশাকে উপজিব্য করে মেধা ও শ্রমের বিনিময়ে সেবা প্রদান করার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করাকে পেশাদারিত্ব বলে।
প্রত্যেক পেশায় আবার ভিন্নমত রয়েছে। তবে পেশাকে কেউ কলঙ্কিত করে জীবিকা নির্বাহ করা নিশ্চয় চাইবেনা। কে না চাই তার পেশা সম্মানের হোক।প্রসংশিত হোক আপন পেশা নিজ সমাজে এটিই কাম্য।
আজকে আপনাদের যে বিষয় অবতারনা করব তার জন্য আগেই দুঃখ প্রকাশ করছি।
সাংবাদিক সংবাদকে জাতির নিকট উপস্থাপন করে ঝুঁকি নিয়ে। ঘটনার পেছনের ঘটনাকে বের করে আনে পেশাদারিত্ব দিয়ে। তারপরও কিছু কথা থেকে যায়।
দেশে সাংবাদিকদের কল্যাণে গঠিত হয়েছে ওয়েজ বোর্ড। বাংলাদেশে লাখো মিডিয়া সংবাদ নিয়ে কাজ করে। সংবাদপত্রের জগতে রয়েছে অগণিত পদ পদবী।
আসেন এবার মূল কথায়, প্রিন্ট কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়া যাই হোক হাতে গোনা কিছু হাউজ ব্যতিরেকে প্রায়ই মিডিয়া কি ওয়েজ বোর্ড অনুসরন করে? নিশ্চয়ই না।
তাহলে ধরে নেন আপন হাউজ গুলোই তো নিজের কর্মীদের বাজারে বিনা বেতনে ছেড়ে দিয়েছে। তো মাঠের কর্মীরা কি করে আসুন একটু জানি।
প্রথমে নিয়োগের জন্য যোগ্য আর অযোগ্য না দেখে নির্দিষ্ট চলন বলনে কেউ বলে ট্রেনিং ফি, কেউ আবার আনুষাঙ্গিক ফি, আবোল তাবোল বলে, আবার মাসিক ১০০/৫০ কপি করে পত্রিকা কিনে মার্কেটে ডান-বাম করান।
নিয়োগ পেয়ে এবার সাংবাদিক হিসেবে জাহির করার পালা। শুরু হলো নিউজের খোঁজ। নিউজ তো আর কেউ হাতে নিয়ে বসে নেই। সবার সামনে সাংবাদিক পরিচয় পর্ব শেষ।
নিউজ তো আসেনা সাথে খরচাপাতি কই? সাংবাদিক তো চিন্তাই কপালে ভাজ পড়ে গেল। কি করা যায়? এলাকার সাংবাদিকদের নিউজের অভাব নেই, নয়া মাঠে নামা সাংবাদিক চিন্তা করে কি করি?
বুম, সেলফি স্টিক, ব্লু থুত স্পিকার ও ভাল রেজুলেশন সমৃদ্ধ মোবাইল কিনে নেমে পড়ে মার্কেটে নিউজ ও রুটি রুজির সন্ধানে।
দেখেন এতদিনের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ফিকে হয়েছে সঞ্চয়। বাঁচার জন্য প্রাণপণ লড়াই করে এবার সামনে এগুতে হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, সংবাদের সংবেদনশীলতা,তথ্যের বিন্যাস,সাবলিল সহজ শব্দ প্রয়োগের অপারগতা,শব্দ ভান্ডারের সংকীর্ণতা, স্থানীয় ও আঞ্চলিক ভাষার প্রভাব ইত্যাদি দোষের কারণে সংবাদ পরিবেশনে জটিলতা।
তারপরও মাঠে যেকোন ভাবে ঠিকে থাকার লড়াইয়ের মনোভাব তৈরি হওয়ায় শুরু হয় ভিন্ন পথাবলম্বন।
পান দোকানদার হতে শুরু করে কাঠ ব্যবসায়ী,বাঁশ ব্যবসায়ী, ইটভাটার মালিক,ট্রাক সমিতি,বাজার সমিতি,সরকারী দপ্তর, সিএনজি অটোরিকশা, জমি জমা বিরোধ, মাটি – বালু ব্যবসায়ী ইত্যাদী শ্রেণি পেশার কাছে ধর্ণা দেওয়া শুরু।কারণ তার পেশার নিয়োগকৃত চাকুরিদাতারা বেতন – সম্মানীর কিছু দেয়না বরং উল্টো বিভিন্ন সময়ে উপলক্ষ করে বিজ্ঞাপন প্রদানে বাধ্য করে।
পেজবুকের পেইজ খুলে চ্যানেল – টিভি হিসেবে চালিয়ে দেয়া, মাহফিল, বিয়ে, কর্ণছেদন, দাওয়াত, মেজবান, দোকান উদ্ধোধন,খেলা উদ্ধোধন, নেতার শোডাউন, জানাজা, পাল্টাপাল্টি মিথ্যা অভিযোগের নামে সংবাদ সম্মেলন ইত্যাদি হলো সংবাদের সোর্স।
নববর্ষ, ঈদ, পূজা,রাষ্ট্রীয় বিশেষ দিবস ইত্যাদি দিবসকে উপলক্ষ করে হাত খরচের “চলমান প্রক্রিয়া ” হিসেবে ছটি পত্রিকার নামে ” কল্লা দিয়ে শুভেচ্ছা ” র নামে পকেট ভারির অন্যতম হাতিয়ার।
“ক্লাব গঠন” করে নেতাদের কাছে ধর্ণা দিয়ে হাতে পায়ে তৈল মর্দন করে “সোফা” ”টিভি” “চেয়ার- টেবিল” ” ইফতার মাহফিলের খরচ” “ঈদ সেলামী” “নববর্ষের হালখাতা” “ঈদ পুনর্মিলনীর নামে অর্থ আদায়”করে বেহায়াপনা, ” ক্লাবের নামে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়ে ভূরিভোজন চাটুকারিতাই মূল কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে সমাজে আবর্তিত হয়।
নিমন্ত্রণ দিক আর না দিক সাংবাদিক হিসেবে অনুষ্ঠানে গিয়ে “মঞ্চের যোগ্য” মনে করে নিজেকে অতিথি হিসেবে চালিয়ে দেয়। মজার ব্যাপার হলো নিজের নিউজে নিজেকে অতিথি হিসেবে সংবাদ পরিবেশন করে বিভ্রান্তি ছড়ানো।
শহরের সংবাদকর্মীরা কোনমতে জীবন যাপন করলেও মফস্বলের তার চিত্র ভিন্ন। হাতেগোনা মুষ্টিমেয় সংবাদকর্মী ছাড়া অধিকাংশ খুচরা “চাঁদা” মাসোহারা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে।
উৎস গুলো হলো করাতকল, বন বিভাগ, বিরোধপূর্ণ বিষয়ে সংশ্লিষ্টতার ফাঁদ পেঁতে স্বার্থ উদ্ধার।
কথিত সাংবাদিকরা হয়ে উঠল খুচরা চাঁদাবাজ।
বাকি আগামী পর্বে। এটি কাউকে উদ্দেশ্যে করে লেখা নয়। সমাজের অসংগতি এড়াবার ও নয়। তাড়নায় লিখিত, দুঃখ পেলে নিজ গুণে ক্ষমা করে একজনকে হলেও শোধরাতে পারলে স্বার্থক হব।