এ ধরণীতে যে বিষয়টাকে সকলকেই অনিবার্যভাবে আবশ্যকীয়ভাবে নিরুপায় হয়ে মেনে নিতে হয় তা হলো মৃত্যু। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই মৃত্যুকে মেনে নেয়। একজন অমুসলিম আল্লাহকে অস্বীকার করতে পারে তবু মৃত্যুকে অস্বীকার করে না। এমন অসংখ্য মানুষ রয়েছে যারা আখেরাতকে বিশ্বাস করে না, মানে না জান্নাত জাহান্নামকে কিন্তু অনিবার্যভাবে তারা মৃত্যুকে মেনে নেয়। প্রত্যেক জানদার প্রাণীকে অবশ্যই মৃত্যুস্বাদ আস্বাদন করতে হবে।.
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ﴿١٨٥ آل عمران﴾
يقول عليه الصلاة والسلام: «قال لي جبريل: يا محمد عِش ما شِئت فإنك مَيِّت، وأحبب من شِئت فإنك مُفارِقه، واعمل ما شِئت فإنك ملاقيه» (رواه الحاكم في المستدرك)
কেন মৃত্যু হয় এ নিয়ে এ যাবত হয়েছে বিস্তর গবেষণা, বিজ্ঞানীদের মেধাশক্তি প্রচুর ব্যয় হয়েছে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করতে কিন্তু কেউ সফলতার মুখ দেখেনি। এই প্রশ্নের প্রায় দুশটি উত্তর প্রদান করা হয়েছে অথচ তার একটিও সঠিক নয়।
সকল ডাক্তার, বিজ্ঞানী, দার্শনিক গবেষক ব্যর্থ হয়ে গেছে মৃত্যুর সংজ্ঞা ও কারণ বের করতে। কিন্তু মৃত্যু এমন রুঢ় একটি বাস্তবতা যাকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। পশ্চিমা বিশ্ব চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিস্তর গবেষণা করেছে, নতুন নতুন রোগের কারণ ও তার দাওয়াই আবিষ্কার করেছে, এবং প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণা ও যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করছে অথচ তারা আজো পর্যন্ত মৃত্যুকে প্রতিরোধ করার, মৃত্যুর সময়কে পিছিয়ে দেয়ার মত কোন পদ্ধতি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়নি। কোন প্রথিতযশা ডাক্তার এই দাবী করেনি যে, সে মৃত্যুর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে। বরং দেখা যায়, অনেক ডাক্তারই যে রোগে স্পেশালিস্ট সেই রোগে আক্রান্ত হয়েই মারা গিয়েছে। হৃদরোগের ডাক্তার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মারা যাচ্ছে এমন ঘটনা ভুরি ভুরি।
আরবীতে একটি কবিতা রয়েছে যার অর্থ হলো,
‘ক্ষয়রোগে মরল এ্যারিস্ট্যটল, প্লেটো মরল পক্ষাঘাতে লোকমান হাকিম মরলেন উন্মদ হয়ে, জালউনিস মরলেন পেটের পীড়ায়’
অর্থাৎ যেসব রোগে আক্রান্ত হয়ে উপরোক্ত জ্ঞানীজনরা মারা গিয়েছিল সে রোগের চিকিৎসার বিষয়ে তাদের দক্ষতাই ছিল সমকালে সবচেয়ে বেশি। তবুও তারা মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পান নাই। এবং সে রোগে আক্রান্ত হয়েই মারা গিয়েছেন।
এদুনিয়াতে যারাই এসেছে সবাই চলে যাবার জন্যই এসেছে। কেউ চিরকাল থাকতে আসে নি।
একটি শিক্ষামূলক গল্প:
একজন ব্যবসায়ীর বন্ধু ছিল নাবিক। ব্যবসায়ী তাকে জিজ্ঞেস করল, তোমার বাপ দাদা কিভাবে মারা গিয়েছেন? নাবিক বলল, আমার বাপ দাদা সহ বংশের সকল পুরুষ সাগরে ডুবে মরেছে। কারণ প্রাচীনকাল থেকে জাহাজ চালনার পেশা আমাদের বংশীয় পেশা। ব্যবসায়ী নাবিককে বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, দোস্ত! তোমার একটুও ভয় লাগে না। তোমার সবাই সাগরে ডুবে মরল অথচ তুমিও সেই নাবিকের পেশাই গ্রহণ করেছ। তুমিও তো ডুবে মরবে! ব্যবসায়ীর বোকার মতো প্রশ্ন শুনে নাবিক তাকে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা তোমার বাপ দাদা কোথায় মারা গেছে? ব্যবসায়ী বলল, বিছানায় শুয়ে। নাবিক তাকে জব্দ করতে বলল, তবুও তুমি সেই ঘরে থাকো? সেই খাটে শোও? তোমার ভয় করে না।
শোনো, আসলে যার মৃত্যু যেখানে লেখা আছে সেখানেই তাকে মরতে হবে। এর থেকে কারো নিস্তার নেই।
মওত থেকে কেউ বাচতে পারবে না:
হযরত হাসান বসরী রহ,মূল্যবান পাথর ও মণি-মুক্তার ব্যবসা করতেন। একবার তিনি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে রোমে গেলেন। সেখানের মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ হল হাসান বসরির। মন্ত্রী বলল, আজ আমরা একটি বিশেষ স্থানে যাব। আপনি চাইলে আমাদের সাথে যেতে পারেন। হাসান বসরি তাদের সাথে সফর করলেন। তখন তিনি দেখলেন, তারা একটি জঙ্গলে আসল। সেখানে তিনি দেখলেন, মূল্যবান রেশমী কাপড়ের একটি তাবু। সেখানে গিয়েই মন্ত্রী ও সৈন্যবাহিনী সেই তাবু প্রদক্ষিণ করল। এরপর দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা তাওয়াফ করল। এরপর এলো বাহারি অলংকারে আপাদমস্তক আবৃত নারীর দল। তাদের হাতে মূল্যবান হিরা জহরত ভর্তি থালা। এগুলো হাতে নিয়ে সেই তাবু প্রদক্ষিণ করল তারা। এরপর বাদশাহ ও মন্ত্রী সেই তাবুর মাঝে প্রবেশ করল ও বেশ কিছুক্ষণ পর বের হয়ে এলো।
এসব অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখে হাসান বসরি মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, এসব কী হল ভাই! মন্ত্রী বলল, এখানে রোম অধিপতির সুদর্শন শক্তিমান একজন যুবক সন্তানের কবর রয়েছে। বছরে একবার আমরা এখানে আসি এবং এই কাজগুলো করি। আমাদের উদ্দেশ্য হল এই কবরওয়ালাকে বোঝানো যে, তোমাকে কবর থেকে দুনিয়াতে জীবিত অবস্থায় ফিরিয়ে আনার সাধ্য যদি আমাদে থাকত তাহলে এই সব সৈন্য সামন্ত, জ্ঞানী ও দার্শনিক ও চাকর নওকর সবাই মিলে তোমাকে ফিরিয়ে আনতাম। কিন্তু বাছা! তোমার এই বিষয়ের ক্ষমতা তো এমন সত্ত্বার হাতে যার নিকট তোমার বাবার শক্তি তো দূরের কথা সারা দুনিয়ার সকল শক্তি এককণা বালুর মতই হীন ও দুর্বল।
একথা শুনে হযরত হাসান বসরি কেঁপে উঠলেন। ব্যবসা বাণিজ্য ছেড়েছুড়ে চলে গেলেন বসরায়। সকল স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান পাথর আল্লাহর রাস্তায় সদকা করে দিলেন। দুনিয়ার সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। এবং একটানা সত্তর বছর এমন এবাদত করলেন যে, সমকালিন সকল বুযুর্গকে ছাড়িয়ে গেলেন।
রাণী প্রথম এলিজাবেতের মৃত্যুর সময় যখন ঘনিয়ে এলো তখন তিনি বললেন, এখন কোন ডাক্তার যদি আমাকে এক মিনিট জীবিত রাখতে পারে তাহলে এক মিনিটের বিনিময়ে আমি তাকে একলাখ করে টাকা দিবো। কিন্তু ইউরোপের সকল ডাক্তার মিলেও তার জীবনে এক সেকেন্ডও যোগ করতে পারল না।
বাদশাহ নওশেরওয়াহকে এক দরবারি এসে খবর দিল, হুযুর! আপনার এক জানের শত্রুর মৃত্যু হয়ে গিয়েছে। নওশেরওয়াহ বলল, তুমি কি এমন কোন খবর শুনেছ যে, খোদা নওশেরওয়াহকে মৃত্যু থেকে মুক্তি দেওয়া হবে? তাহলে আর আনন্দ কিসের?
أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِكْكُمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِي بُرُوجٍ مُشَيَّدَةٍ ﴿٧٨ النساء﴾
সংক্ষিপ্ত জীবনের তাৎপর্য:
পূর্ববর্তী যামানার উম্মতদেরকে মহান আল্লাহ হাজার বছরের জীবন দান করতেন এজন্য যে, তারা এই জীবন আল্লাহর এবাদতে কাটাবে। কিন্তু তারা এদিকে কোন ভ্রুক্ষেপই করে নি। তারা মনে করেছে, এত লম্বা জীবন! তাহলে কেন আনন্দ ফূর্তী করবো না। চলো খাওদাও ফূর্তী করো। বৃদ্ধ বয়সে এবাদত করা যাবে। এরপর মানব জীবনের মেয়াদ কমিয়ে একশ বছর করে দেয়া হল যাতে তারা এই স্বল্প জীবনও যিকর ও এবাদতে কাটায়। এরপরও মানুষ গাফলতি ও অবহেলায় যিন্দেগী কাটিয়ে দিত।
الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا ﴿2 الملك﴾
হযরত জিব্রীল আমিন আ, নূহ আ,কে জিজ্ঞেস করল, হযরত! আপনার জীবন অন্যান্য নবীগণের থেকে দীর্ঘ। আপনি দুনিয়াকে কেমন পেয়েছেন? তিনি বললেন, দুনিয়া সম্পর্কে আমার বক্তব্য হল এটা এমন একটি গৃহের মত যার দুটি দরজা। একটি দিয়ে প্রবেশ করলাম এবং অপরটি দিয়ে বের হয়ে গেলাম।
মৃত্যুর স্থান সুনির্ধারিত:
মৃত্যুর জন্য যে সময় নির্ধারিত, যে স্থান নির্ধারিত ও যে অবস্থা নির্ধারিত সেইভাবেই মৃত্যু হবে। মৃত্যু থেকে পলায়নপর মানুষ ঐ স্থানে গিয়েই আশ্রয় নেয় যেখানে তার মৃত্যু লেখা রয়েছে।
একবার সুলাইমান আ,এর নিকট একজন উযির বসে ছিল। এমন সময় মালাকুল মওত সাক্ষাতের জন্য এলেন। মালাকুল মওত সেই উযিরের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালেন। সুলাইমান আ,কে উযির জিজ্ঞেস করল, হযরত! এই লোকটি কে? সুলাইমান বললেন এ হল মৃত্যুর ফিরিশতা আযরাইল। উযির বলল, হুযুর! সে আমার দিকে ভয়ংকর দৃষ্টিতে কয়েকবার তাকিয়েছে। আমি প্রচন্ড ভিত সন্ত্রস্ত। আমাকে বুমাস অঞ্চলে পাঠিয়ে দিন। সুলাইমান আ, বাতাসকে হুকুম দিলেন। বাতাস তাকে হাজার ক্রোশ দূরের দ্বীপ বুমাসে পৌছে দিল এক মূহুর্তে। উযির যেই না সেই যমিনে কদম রাখল অমনি আযরাইল তার জান কবজ করে নিল। এর কিছুদিন পর আযারাইল আবার এলেন নবী সুলাইমানের দরবারে। হযরত সুলাইমান উযিরের সেই ঘটনা আযরাইলকে বললেন। আযরাইল বললেন, হযরত! আমি সেদিন তাকে দেখছিলাম আর বিস্মিত হচ্ছিলাম যে, এই লোকের তো হায়াত শেষ। অনতিবিলম্বে তার মৃত্যু হবে বুমাস দ্বীপে। আর দুমিনিট পরই সেখানে তার জান কবজ করার হুকুম। সে এখানে বসে আছে কেন?
মৃৃত্যু থেকে কেউ নিরাপদ নয়:
মানুষ বলে অকাল মৃত্যু আকস্মিক মৃত্যু। আমরা প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় পড়ি অমুক ব্যক্তি আকস্মিক মৃত্যুতে মারা গিয়েছে। অথচ একথার কোন যৌক্তিকতা নেই। কারণ দুটি কথা সকল মানুষই জানে এবং বিশ্বাস করে, এক হল আমাকে মরতে হবে এবং মৃত্যুর জন্য কোন সময় নির্ধারিত নয়। এদুটি বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখলে আমাদের মাঝে কোন অভিযোগ থাকবে না।
যে মৃত্যুকে আমরা ভয় করি সেই মৃত্যু প্রতিদিনই আমাদের নিকট আসাযাওয়া করছে। তা আমাদের ডানে ও বামে। তা উপরে ও নিচে। তা সবখানে। মরুভূমির নির্জন প্রান্তর, অনুষ্ঠানের লোকারণ্য স্থল, সমুদ্রের গভীর তলদেশ ও স্থলের জনমানব ভর্তি স্থান সবখানেই মৃত্যু ঘুরে বেড়ায়।
মৃত্যুর আঘাত থেকে কেউ বাচে না। মৃত্যু ছোবল দেয় আলেমকে, ছোবল দেয় সাধারণ মানুষকে। হানা দেয় ধনীর অট্টালিকায়, হানা দেয় গরিবের দরিদ্র গৃহে। সে ছাড় দেয় না অহংকারী ফেরআউনকে, ছাড় দেয় না এবাদত গুজার বুযুর্গকে। মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পায়নি আল্লাহর খলিল ইবরাহিম আ, বাচেনি যাবিহুল্লাহ ইসমাইল আ,। মৃত্যুর তিক্ত স্বাদ আস্বাদন করেচে আবু জেহেল ও আবু লাহাব। মৃত্যুর নিকট নিজেকে সপে দিয়েছেন হযরত সিদ্দীকে আকবার ও হযরত ওমর রা,। এমন কি আল্লাহর পরম প্রিয় নবীকুল শিরোমণি মুহাম্মদ (সা)কেও মৃত্যুকে বরণ করতে হয়েছে।
قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلَاقِيكُمْ ﴿8 الجمعة﴾
মৃত্যুর ফিরিশতার মৃত্যু:
এমন কি সকল প্রাণীর প্রাণ হন্তারক আযরাইলকেও একসময় মৃত্যুস্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মুসনাদে আবু ইয়ালার একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, সকল প্রাণী যখন মারা যাবে তখন মালাকুল মউত আল্লাহ তাআলার নিকট আসবেন। এবং আরজ করবেন, হে আল্লাহ আসমান যমিনের সকল প্রাণী মৃত্যুবরণ করেছে। এখন শুধু বাকি আছে সেসব ফেরেশতা যাদের ব্যাপারে আপনি এখনো মৃত্যুর ফায়সালা করেননি। আল্লাহ বলবেন, এখন কে কে বাকি। জিব্রিল বলবেন, বাকি আছে শুধু আরশ বহানকারী ফিরিশতা এবং জিব্রিল ও মিকাইল। আল্লাহ বলবেন, জিব্রিল ও মিকাইলের মৃত্যু হবে। আরশ বলবে, আল্লাহ! জিব্রিল ও মিকাইলও মারা যাবে? আরশকে আল্লাহ ধমক দিয়ে বলবেন, তুই চুপ কর। আমার আরশের নিচে যত ফিরিশতা আছে সবাইকে মরতে হবে। এরপর জিব্রিল- মিকাইল ও অন্যান্য ফেরেশতাদের জান কবজ করে আযরাইল এসে বলবেন, আল্লাহ! এখন শুধু আমি আপনি আর আরশ বহনকারী ফিলিশতারা বাকি আছে। এরপর আল্লাহর হুকুমে তাদের জানও কবজ করা হবে। এরপর আযরাইল আল্লাহর নিকট আসবেন। আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, এখন কে কে বাকি? যদিও আল্লাহ ভালো করেই জানেন কে কে বাকি আছে। আযরাইল বলবেন, হে রব! এখন শুধু আমি আর আপনি বাকি আছি। আর আপনার মৃত্যু নেই, আপনি চিরঞ্জীব। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমিও আমার একটি মাখলুক। যে দায়িত্ব তোমাকে দেয়া হয়েছিল তা ঠিকঠাক তুমি আদায় করেছো। এখন নিজের জান কবজ কর। তখন মালাকুল মউত নিজের জান কবজ করবে।
এ প্রসঙ্গে অপর একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, মালাকুল মওত যখন নিজের জান কবজ করবে তখন বলবে, মৃত্যুর যন্ত্রণা যে এত ভয়াবহ যদি আগে জানতাম তাহলে কারো জান কবজ করতাম না।
অসীম আল্লাহই একমাত্র বাকি থাকবেন। তখন বজ্রকণ্ঠে তিনি ঘোষণা দিবেন, আজ রাজত্ব কার?
আল্লাহু আকবার! কেমন ভিতিপ্রদ অবস্থার সৃষ্টি হবে। ঐ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ক্ষমতা কারো থাকবে না। যে মানুষ গর্ব করত আপন ধন সম্পদ নিয়ে, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে। ফখর করত নিজের কলকারখানা নিয়ে, অফিস নিয়ে। যার পা মাটিতে ঠেকতো না ক্ষমতার দর্পে এদের কারো যবানই আজকের দিনে উচ্চকিত হতে পারবে না। কারণ ইতিমধ্যে তাদের দেহ, মাংস হাড্ডি সবই মাটির সাথে মিশে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। আজ শুধু একজনই আপন অস্তিত্ব নিয়ে বাকি রয়েছেন। মহামহিম আল্লাহ। তিনিই ঘোষণা দিবেন ‘আজকের রাজত্ব একমাত্র পরাক্রমশালী আল্লাহর’ আমরা আজ যে মৃত্যুকে ভুলে ঈমান আমল বিহীন জীবন যাপন করছি সে মৃত্যু প্রতিনিয়ত আমাদের নিকট আসছে। আমরা দুনিয়া ও শয়তানের ধোকায় মৃত্যুকে ভুলে বসে আছি অথচ প্রতিদিন মৃত্যু আমাদেরকে ডাকছে আর বলছে- আমি সেই মৃত্যু যে কন্যা ও মাতার মাঝে অন্তড়ায় হয়।
আমি সেই মৃত্যু যে প্রিয়সীকে প্রেমিক থেকে জোযন জোযন দূরে সারিয়ে দেয়।
আমি সেই মৃত্যু যে জানের জান স্বামী-স্ত্রীর মাঝে চির বিচ্ছেদ ঘটায়।
আমি সেই মৃত্যু যে জনপদকে বিরান করে দেয়।
আমি সেই মৃত্যু যে তোমাদেরকে খুঁজে খুঁজে বের করবে যেখানেই তোমরা আশ্রয় নাও না কেন, এমনকি তা যদি হয় সুদৃঢ় দূর্গ।
প্রত্যেক প্রাণীকেই আমার স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।
أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِكْكُمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِي بُرُوجٍ مُشَيَّدَةٍ ﴿٧٨ النساء﴾
হযরত আবু হুরাইরা (রা) বলেন, একবার হুযুরের সাথে একটি জানাযায় শরিক ছিলাম। কবরস্তানে পৌছে হুযুর একটি কবরের নিকটে তাশরিফ নিয়ে গেলেন। তিনি বললেন, এমন কোন দিন নেই যেদিন কবর এই ঘোষণা দেয় না- হে আদম সন্তান! তুমি আমায় ভুলে বসে আছো। আমি অপিরিচিতর ঘর। আমি নির্জনতার ঘর। আমি পোকামাকড়ের ঘর। আমি সাপ বিচ্ছুর ঘর। আমি সংকীর্ণতার ঘর। তবে যার প্রতি আল্লাহর রহমত রয়েছে তার জন্য নয়। এরপর রাসূলুল্লাহ বললেন, হয়তো কবর জান্নাতের একটি বাগান নয়তো জাহান্নামের একটি গর্ত।
সম্মানিত উপস্থিতি! কবরকে ভুলে থাকলেও একদিন অবশ্যই আমাদেরকে কবরের বাসিন্দা হতে হবে। উর্দূতে একটি শের রয়েছে যার অর্থ
এক বাদশাহ দেখলেন, কবরস্থানে বসে আছে এক দরবেশ দরবেশকে বাদশা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি আবাদিতে থাকো না কেন?
দরবেশ বললেন, আসল আবাদি তো এটাই। কারণ সবাই এখানেই আসে।
মৃতরা আমাদের প্রতিদিন আমাদের সামনে দিয়ে আমাদেরই পরিচিত অনেক বন্ধু ও আত্মীয় বিদায় নিচ্ছে। তাদের জানাযা পড়ছি আমরা। আমরা কি একটুও ভাবি যে, যে লোকটা গতকালও ছিল সে আজ নেই। আজ যে আছে সে আগামী কালই চলে যেতে পারে। যে কোন খান্দানকে প্রশ্ন করুন, দেখবেন তাদের মৃতদের সংখ্যা বেশি জীবিতদের সংখ্যা একেবারেই নগন্য।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এ কথা বোঝানোই আমার উদ্দেশ্য যে, মৃত্যুই হল পরম সত্য। মৃত্যু খোদাতাআলার অলঙ্ঘনীয় ফায়সালা।
এখন দেখার বিষয় হল আমরা এই মৃত্যুর জন্য কতটুকু প্রস্তুতি নিচ্ছি। মৃত্যু পরবর্তী অনন্ত জীবনের জন্য কী আমল করছি। একটি সুন্দর মৃত্যুর জন্য কী তদবীর করছি। বলবেন, মৃত্যুও আবার সুন্দর অসুন্দর আছে না কি?
অবশ্যই আছে। আলবৎ আছে। প্রত্যেকের মৃত্যুকষ্ট আছে।
আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যু স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। মৃত্যুর যদি কোন স্বাদ না থাকত তাহলে এমন ঘোষণা দিতেন না তিনি। আল্লাহর প্রিয়তম নবী মুহাম্মদ (সা)ও মৃত্যুকালে কষ্ট অনুভব করেছেন। তিরমিযী শরিফের ৯৯৪ নম্বর হাদিসে বর্ণিত হচ্ছে- মৃত্যুর সময় রাসূলুল্লাহ (সা)এর নিকট একটি পানির পাত্র ছিল। বারবার তিনি সেখানে হাত প্রবিষ্ট করছিলেন আর প্রার্থনা করছিলেন, হে আল্লাহ! মৃত্যুর কষ্ট থেকে আমাকে হেফাজত করুন।
কোরআনে বর্ণিত হচ্ছে- وَجَاءَتْ سَكْرَةُ الْمَوْتِ بِالْحَقِّ ذَٰلِكَ مَا كُنْتَ مِنْهُ تَحِيدُ ﴿19 ق﴾ এবং মৃত্যুকষ্ট অবশ্যই আসবে, তা হল ঐ বস্তু যা তোমরা এড়িয়ে চল’। ( সুরা কাফ:১৯)
সুতরাং বোঝা গেলো মৃত্যুর স্বাদ বা কষ্ট সবাইকেই গ্রহণ করতে হবে। তবে মুমিনের মৃত্যু ও পাপীর মৃত্যুর হালত এক নয়। কোরআনের ভাষ্য ও হাদিসের বর্ণনা দ্বারা জানা যায় মুমিনের মৃত্যু হবে সুন্দর ও আরামদায়ক। আল কোরআনে এরশাদ হচ্ছে-
‘এবং যাদের মৃত্যুঘটায় ফেরেশতারা আরামদায়ক অবস্থায়। এবং তারা বলে, তোমাদের উপর সালাম। তোমরা দুনিয়াতে যে নেক আমল করেছো সেজন্য জান্নাতে দাখিল হও’ (সুরা নাহল:৩২)
অপর একটি আয়াতে এরশাদ হচ্ছে- ‘হে প্রশান্তিময় আত্মা! তোমার রবের দিকে চলো সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত হয়ে এবং সন্তুষ্টচিত্তে। প্রবেশ করো আমার প্রিয় বান্দাদের দলে। এবং প্রবেশ করো আমার জান্নাতে’ (সুরা ফাজর:২৭-৩০)
আরেকটি আয়াতে এরশাদ হচ্ছে- {إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلائِكَةُ أَلا تَخَافُوا وَلا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ} [فصلت:30] ‘যারা বলে আমাদের রব আল্লাহ। এবং একথার উপর আজীবন অবিচল থাকে তাদের মৃত্যুকালে রহমতের ফেরেশতারা তাদের নিকট অবতীর্ণ হয়। তারা তাকে বলে তোমরা ভয় পেয়ো না, এবং ব্যথিত হয়ো না। আর সুসংবাদ গ্রহণ করো ঐ জান্নাতের যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে প্রদান করা হয়েছে। আমরা দুনিয়াতে তোমাদের বন্ধু ছিলাম, আখেরাতেও থাকবো। এবং সেথায় তোমাদের জন্য থাকবে তোমাদের হৃদয় যা চায় ও তোমরা যেসব বস্তুর চাহিদা কর। এসব তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে মেহমানদারি।’ (সুরা ফুসসিলাত:৩০)
এই আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফেরেশতারা মৃত্যুর সময় তাদের নিকট নেমে আসে। তারা তাদেরকে বলে, তোমাদের কোন দুশ্চিন্তা নেই, তোমরা তোমাদের আখেরাতের জন্য যে আমল প্রেরণ করেছো সে জন্য। আর দুনিয়ায় তোমরা যে সম্পদ ও সন্তানাদি রেখে যাচ্ছো সে জন্যও তোমাদের চিন্তার কোন কারণ নেই। তোমার অবর্তমানে আমরা তাদের দেখভাল করব।
এসব প্রমাণ করছে, মুমিন বান্দার মৃত্যু আরামদায় ও সহজ হয়। মৃত্যুর সময় তার মনে কোন দুঃখ থাকে না। জান্নাতের সুসংবাদ লাভ করে তার সকল দুঃখ কষ্ট লাঘব হয়ে যায়। সে পরম আনন্দে নিশ্চিন্ত মনে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেয়।
রাসূলুল্লাহ (সা) এরশাদ করেছেন, মুমিন বান্দার রুহ বের হয়ে যায় যেমন একটি পানির পাত্র থেকে এক ফোটা পানি পড়ে যায়।
আরেকটি হাদিসে আরো সুন্দর ও হৃদয়গ্রাহী ভাষায় আল্লাহর রাসূল (সা) মুমিন বান্দার আরামদায়ক মৃত্যুর বর্ণনা দিচ্ছেন। রাসূল (সা) বলছেন, একজন মুমিন বান্দার যখন দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার সময় হয় তখন তার নিকট এমন একদল ফেরেশতা নেমে আসে যাদের চেহারা সূর্যের ন্যায় শুভ্রোজ্জ্বল। তাদের সাথে থাকে জান্নাতের কাফন এবং জান্নাতের সুগন্ধী। তারা মৃতের নিকট তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত সাড়িবদ্ধ হয়ে বসে পড়ে। এরপর মালাকুল মওত আসেন। তিনি মৃতের মাথার নিকট সমাদরের সাথে বসে তাকে বলেন, হে উত্তম রুহ! তুমি চলো তোমার প্রভুর ক্ষমা ও মাগফিরাতের দিকে। তখন মুমিন বান্দার রুহ বের হয়ে যায় পানপাত্র থেকে এক ফোটা পানি টপকে পড়ার মতো সহজভাবে। এরপর মালাকুল মওত তার রুহকে গ্রহণ করেন। তার রুহকে তারা হাতে নিতে না নিতেই আরেকজনকে দিয়ে দেন। এভাবে অতিদ্রুত সেটাকে জান্নাতের সুবাস মাখিয়ে শুভ্র কাফনে রাখা হয়। আর সে রুহ থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুগন্ধীময় আতরের চেয়েও সুবাস বের হতে থাকে। এরপর সেই রুহকে নিয়ে আকাশের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করতে থাকে, এটা কার রুহ? তখন বলা হয় এ হলো অমুক ব্যক্তির সন্তান অমুক। এভাবে তাকে দুনিয়াতে যে সুন্দর নামে ডাকা হত সেই সুন্দর নাম বলে। এরপর তাকে আসমানের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। তার জন্য আসমানের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হয়। এভাবে সপ্তম আসমানের উপরে খোদা তাআলার অতি নিকটে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন আল্লাহ বলেন, আমার এই বান্দাকে ইল্লিয়ীনবাসীদের অন্তর্র্ভূক্ত করে নাও। এবং তাকে যমিনে ফিরিয়ে দিয়ে আসো। কারণ সেখান থেকেই আমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছি, সেখানেই তাদেরকে ফিরিয়ে দিবো, এবং সেখান থেকেই তাদেরকে পুনরায় উঠাবো। এরপর তাকে কবরে দুজন ফেরেশতা জিজ্ঞাসাবাদ করতে আগমন করে। তারা তাকে প্রশ্ন করে তোমার রব কে? তোমার দিন কী? রাসূলকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে এই ব্যক্তি কে? তখন সে সবগুলো প্রশ্নের যথাযথ জবাব প্রদান করে। তখন আসমান থেকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করে, আমার বান্দা সত্য বলেছে। তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও। তাকে জান্নাতের লেবাস পড়িয়ে দাও। তার কবরের দিকে জান্নাতের জানালা খুলে দাও। ফলে তার কবরের দিকে জান্নাতের সুবাস আসতে থাকে। এমন সময় একজন সৌম্যদর্শন কান্তিময় চেহারার যুবক আগমন করে। তার পোশাক থেকে অত্যন্ত সুন্দর সুগন্ধী বের হয়। মৃতব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করে, তুমি কে? সে বলে আমি তোমার নেক আমল। তখন সেই নেক বান্দা বলতে থাকে ইয়া রাব! কেয়ামত কায়েম করুন, দ্রুত কেয়ামত কায়েম করুন আমি আমার সম্পদ ও পরিবারের নিকট যাব।
সুতরাং উত্তম ও সুন্দর মৃত্যুর জন্য আমাদেরকে চেষ্টা করা উচিৎ। মালাকুল মওত একদিন তো অবশ্যই আসবে। সেদিন আর প্রস্তুতি নেয়ার সময় থাকবে না।
অপরদিকে কাফের ও পাপী বান্দার মৃৃত্যু হবে অত্যন্ত ভয়ংকরভাবে। নেহায়েত যন্ত্রণাকাতর অবস্থায়। পাপী মানুষের মৃত্যুর অবস্থা শুনলে শরীর শিহরিত হয়, অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। মন ভাবতে থাকে, মৃত্যুর কষ্টই যদি এত কঠিন ও কষ্টদায়ক হয় তাহলে আখেরাতের শাস্তি কতটা কঠিন ও বেদনাদায়ক হবে। আল্লাহ বলছেন وَلَوْ تَرَىٰ إِذِ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَاتِ الْمَوْتِ ﴿٩٣ الأنعام﴾ অর্থাত, এরশাদ হচ্ছে-আপনি যদি জালেমদেরকে মৃত্যু যন্ত্রণার সময়ে দেখতেন যখন ফেরেশতারা তাদের হস্ত প্রসারিত করবে (আর বলবে) তোমাদের রুহগুলোকে বের করো। আজ তোমাদেরকে প্রদান করা হবে লাঞ্ছনাকর আযাব’
আল কোরআনে এরশাদ হচ্ছে
وكذلك قولـه تعالى: الَّذِينَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلائِكَةُ ظَالِمِي أَنْفُسِهِمْ فَأَلْقَوُا السَّلَمَ مَا كُنَّا نَعْمَلُ مِنْ سُوءٍ بَلَى إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ فَادْخُلُوا أَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا فَلَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِينَ
অর্থাৎ ‘যাদেরকে ফেরেশতারা জালেম অবস্থায় মৃত্যুদান করবে। অপরাধীরা তখন আত্মসমর্পণ করবে। (অবস্থার ভয়াবহতায়) তারা বলবে, আমরা কোন অপরাধ ও পাপ করিনি। (ফেরেশতারা বলবে) অবশ্যই আল্লাহ ভালো জানেন তোমরা কী করতে। সুতরাং তোমরা জাহান্নামের দরজাসমূহ দিয়ে চিরকালের জন্য প্রবেশ করো৷ আর অহংকারীদের পরিণতি কতই না নিকৃষ্ট৷ (সুরা নাহাল:২৮)
অপর আয়াতে এরশাদ হচ্ছে- وَلَوْ تَرَى إِذْ يَتَوَفَّى الَّذِينَ كَفَرُوا الْمَلائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ ذَلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيكُمْ
وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِظَلامٍ لِلْعَبِيدِ [ الأنفال: 50، 51].
হে নবী, আপনি যদি দেখতেন যখন ফেরেশতারা কাফেরদের রুহ কবজ করবে। তখন তারা অপরাধীর চেহারায় ও পশ্চাতদেশে প্রহার করবে। (আর বলবে) তোমরা আগুনের শাস্তি ভোগ কর৷ এই শাস্তি তোমাদের কর্মফল৷ আর আল্লা বান্দার প্রতি জুলুম করেন না’ (সুরা আনফাল:৫০)
হাদিসে পাকে রাসূলুল্লাহ (সা) এরশাদ করছেন, যখন পাপী ও কাফেরের মৃত্যুর সময় সন্নিকটে হবে তখন তার রুহ দেহের বিভিন্ন স্থানে ছুটাছুটি করতে থাকবে। এরপর ফেরেশতারা টেনে হিচড়ে সেটাকে বের করে আনবেন।
এর থেকেও আরো হৃদয়বিদারক ভাষায় কাফের ও পাপী ব্যক্তির মৃত্যুকষ্টের অবস্থা আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। দেখুন হাদিসটি।
যখন কোন কাফের ও পাপী মানুষের মৃত্যুর সময় হয় তখন তার নিকট কালো কুৎসিত ভয়ালদর্শন ফেরেশতারা নেমে আসে। তাদের হাতে থাকে জান্নাতের বেলচা। তারাও মৃতের দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে বসে যায়। এমন সময় মালাকুল মওত আসেন। তার মাথার নিকট বসে বলেন হে খবিস আত্মা বের হও তোমার প্রভুর ক্রোধ ও আযাবের দিকে। তখন তার আত্মা দেহময় ছুটতে থাকে। মালাকুল মওত টেনে হিচড়ে সেটাকে বের করে আনেন। যথন তারা তার রুহ নেয় কেউ তা হাতে রাখে না, অপর ফেরেশতার হাতে দিয়ে দেয়। এভাবে সেটাকে জাহান্নামের বেলচায় রাখা হয়। আসমান দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় সেখানের ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করে এই খবিশ নিকৃষ্ট রুহ কার? তখন দুনিয়াতে তার সবচেয়ে নিকৃষ্ট নামে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। যখন তার জন্য আসমানের দরজা খোলার আবেদন করা হয়। কিন্তু দরজা খোলার অনুমাতি দেয়া হয় না। এপর্যায়ে রাসূলুল্লাহ (সা) তেলোয়াত করলেন, তাদের জন্য আসমানের দরজাসমূহ খোলা হবে না। আসমান থেকে আল্লাহ হুকুম দেন, তার রুহকে সিজ্জীনবাসীদের মাঝে দাখিল করো। অতপর যখন দুজন ফেরেশতা তাকে সেই তিনটি প্রশ্ন করে তখন সে বলে আমি এসব সম্পর্কে কিছুই জানি না। তখন আসমান থেকে একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, এই পাপীর জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও। তাকে জাহান্নামের পোশাক পড়িয়ে দাও। তার কবরের দিকে জাহান্নামের দরজা খুলে দাও। এভাবে সে কেয়ামত পর্যন্ত শাস্তি পেতে থাকে। (হাদিসটি মুসনাদে আহমাদ ও হাকিমে বর্ণিত হয়েছে। শায়খ আলবানি হাদিসটিকে সহী বলেছেন।)
উল্লিথিত বিবরণের দ্বারা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, নেককার মুমিনের মৃত্যু হবে সুন্দর ও প্রশান্তিদায়ক। মৃত্যুকালে তার কোন দুশ্চিন্তা পেরেশানি থাকবে না। আর বদকার পাপী কাফেরের মৃত্যু হবে অত্যন্ত কষ্টদায়ক ও মর্মবিদারক। মৃত্যুর সময় তাদেরকে প্রহার করা হবে। প্রহার করে তার রুহকে টেনে বের করে আনা হবে। এবং কবরে ফেলে দেওয়ার পর থেকেই তার উপর জাহান্নামের শাস্তি শুরু হয়ে যাবে।
সম্মানিত মুসল্লিবৃন্দ আমরা যেহেতু মুসলমান আমরা এসব কোরআনের আয়াত ও হাদিসকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। এজন্য অবশ্যই আমাদের সচেতন হয়ে যাওয়া দরকার। এবং মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশনা মত জীবন অতিবাহিত করা উচিত। নয়ত মৃত্যুর সময় কষ্ট ও ভয়ংকর যন্ত্রণা তো হবেই। সেই সাথে আখেরাতের আযাবও শুরু হয়ে যাবে। আর মনে রাখতে হবে, যে যেভাবে জীবন যাপন করবে তার মৃত্যু ঠিক সেভাবেই হবে।
বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ : +৮৮ ০১৮১১৮৬৭৫৮৪
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত