গাজীপুরে ছাত্রসেনা নেতাকে ‘নির্যাতন’ : কারাগারে মৃত্যু, চট্টগ্রামে বিক্ষোভ
বলাৎকারের ‘মিথ্যা অপবাদ’ দিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় সদস্য ও ঢাকা নগরের সাবেক সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিনকে নির্মম নির্যাতন ও হত্যা করার অভিযোগ ওঠেছে। এর প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রসেনা। সমাবেশ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা না হলে সারাদেশ ‘অচল’ করার হুঁশিয়ার দেন নেতৃবৃন্দ।
নেতৃবৃন্দের দাবি— গাজীপুর থেকে অসংখ্য আশেকে রাসূলকে নিয়ে ঢাকায় ‘ম্যাস গেদারিং ফর প্যালেস্টাইন’ কর্মসূচিতে যাওয়ায় তাঁর ওপর আক্রোশ ছিল একটি পক্ষের। সেই ‘আক্রোশ’ থেকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম প্লেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে কেন্দ্রের নির্দেশে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ও ইসলামী ছাত্রসেনা একাত্মতা প্রকাশ করে।
বক্তারা বলেন, ২৪ এর ছাত্রঅভ্যুত্থানে একজন ভাই বলেছিল, পানি লাগবে পানি। আজ এখানে দাঁড়িয়ে আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের উদ্দেশ্যে বলবো— ওরে ভাই, রক্ত লাগবে রক্ত?
বক্তারা আরও বলেন, ৫২ সালে রক্ত দিয়ে ভাষাকে স্বাধীন করা হয়েছে, ৭১ সালে রক্ত দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিদেরকে এ বাংলাদেশ থেকে পালাতে বাধ্য করা হয়েছে, এরপরও যদি এ স্বাধীন বাংলাদেশে কারো রক্তের প্রয়োজন হয় আজকে এ রক্ত দিয়ে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ভাসিয়ে দিতে পারবো।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে বক্তারা বলেন, আপনারও কি লাশের প্রয়োজন আছে! আমরা লাশ দিতে প্রস্তুত আছি। তারপরও এ বাংলার জমিন থেকে নারায়ে তাকবীর, নারায়ে রিসালাতের স্লোগান বন্ধ হবে না।
রইস উদ্দিনকে ‘খুন’ করার কারণ জানিয়ে বক্তারা বলেন, ২৬ এপ্রিল গাজীপুর থেকে অসংখ্য আশেকে রাসূলকে নিয়ে ঢাকার সমাবেশে গিয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে খুন করা হয়েছে। এ ঘটনা কারা ঘটিয়েছে তা আমাদের কাছে ‘স্পষ্ট’। যারা এ হত্যাকাণ্ড করেছে, যারা এ দেশের মধ্যে ইসলামের নাম দিয়ে বিভিন্ন মাজারে ভাঙচুর করে তাদের বলে দিতে চাই— আমাদের সুন্নিরা বার বার রক্ত দিয়েছে, প্রয়োজনে সুন্নিরা রইস উদ্দিনের জন্য আবারও রক্ত দিতে রাজপথে নামবো। দ্রুত সময়ে আমাদের ভাইকে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে এবং আমরা যদি রাজপথে নামি তাহলে সচল হাত দিয়ে সারাদেশ অচল করে দিব।
হুসাইনীরা তলোয়ার হাতে নিতে প্রস্তুত জানিয়ে বক্তারা বলেন, ‘ম্যাস গেদারিং ফর ফিলিস্তিন’র শত শত গাড়ি আটকিয়েও যাদের এখনো পর্যন্ত সুন্নিদের বিরুদ্ধে আক্রোশ কমেনি, যারা রইস উদ্দিনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তাদের বলতে চাই— যদি মুসলমান পরিচয়ে এজিদের মতো আচরণ করে তাহলে আমরা হুসাইনীরা তলোয়ার হাতে নিতে প্রস্তুত আছি।
উল্লেখ্য, শনিবার (২৬ এপ্রিল) ঢাকায় অনুষ্ঠিত ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে সুন্নিদের সমাবেশে মাওলানা রইস বিপুল সংখ্যক মানুষ নিয়ে যোগ দেন। এর পরদিন রবিবার সকালে গাজীপুরে ‘বলাৎকারের’ অভিযোগে রইস উদ্দিনকে প্রকাশ্যে ব্যাপক মারধর করে কিছু মানুষ। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আদালতের মাধ্যমে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠায়। রাত ৩টার দিকে তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত রইস উদ্দিন (৩৫) কুমিল্লার মতলব থানার বাদশা মিয়ার ছেলে। তিনি গাজীপুরের হায়দরাবাদ আখলাদুল জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব ছিলেন।
এদিকে, রইস উদ্দিনের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে প্রথমে নির্মম নির্যাতন ও পরে হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকায়ও সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় গাজীপুরে মব সৃষ্টি করে তরুণ আলেমে দ্বীন ও সংগঠক মাওলানা রইস উদ্দিনকে নির্যাতন ও বিনা চিকিৎসায় কারা হেফাজতে মৃত্যুর সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।